ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৫/০২/২০২৫ ৭:৫০ এএম

উম্মে আহমাদ ফারজানা
সমাজের পর্দাহীনতার সয়লাবের একটি উপমা হলো গায়র মাহরাম তথা বেগানা নারী-পুরুষ নির্জনে একত্র হওয়া। ইসলাম একে হারাম ঘোষণা করেছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সেসব নারীর কাছে তোমরা যেয়ো না। কেননা তোমাদের সবার মধ্যেই শয়তান (প্রবাহিত) রক্তের শিরায় বিচরণ করে।

আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কখনো কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ না করে, যতক্ষণ না ওই মেয়ের কোনো মাহরাম তার সঙ্গে থাকে। কারণ সে সময় তৃতীয় জন থাকে শয়তান।

’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)
বর্তমানে নারী-পুরুষের নির্জনতাকে অনেকে পাপই মনে করে না। দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, ড্রাইভার-মহিলা গৃহকর্তা, ডাক্তার-নার্স, অফিসের বস-মহিলা পিএ, শিক্ষক-ছাত্রী, পীর, মহিলা মুরিদ ইত্যাদি বেগানা নারী-পুরুষ প্রতিনিয়ত নির্জনে একত্র হয়ে কাজ করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে তা হারাম।

ইসলাম নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।

তাই যেখানে তাদের সম্মান বা সুরক্ষা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে বিশেষ বিধান দিয়ে সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিবেচনায় ইসলামের বিধান হলো, মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। যাদের সঙ্গে চিরতরের জন্য বিবাহ অবৈধ, তাদের মাহরাম বা এগানা বলা হয়। এ ছাড়া অন্যদের গায়র মাহরাম বা বেগানা বলা হয়।
সাধারণ সফর ও হজের সফর সব ক্ষেত্রে একই বিধান : মাহরাম ছাড়া নারীর সফর বৈধ নয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোনো মাহরাম পুরুষকে সঙ্গে না নিয়ে এক দিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়েজ নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৮৮)
কোনো কোনো হাদিসে এক দিন এক রাতের পরিবর্তে তিন দিন তিন রাতের কথা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারীর সঙ্গে কোনো মাহরাম পুরুষ না থাকলে সে যেন তিন দিনের সফর না করে।’ (বুখারি : ১০৮৭)

আসলে এখানে দিন-রাত মুখ্য নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে মাহরাম ছাড়া নারীর যেকোনো সফর বৈধ নয়। এখানে মূল কথা হলো, যদি ৪৮ মাইল (৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে সফর হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষদের থেকে নিজের কোনো মাহরাম আত্মীয় বা স্বামী সঙ্গে না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নারীর জন্য সফর করা জায়েজ নেই। এটি হজের সফর হোক বা উচ্চশিক্ষার জন্য সফর হোক।

তার মানে এই নয় যে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। প্রয়োজন হলে অবশ্যই ঘরের বাইরে যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে উম্মাহাতুল মুমিনিন সাওদা বিনতে জামআ (রা.) কোনো কারণে বাইরে গেলেন। উমর (রা.) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! হে সাওদা! তুমি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারনি।

এতে তিনি নবী (সা.)-এর কাছে ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বলেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশতওয়ালা একখানা হাড় ছিল। এমন সময় তাঁর কাছে ওহি অবতীর্ণ হলো। ওহি শেষ হলে নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।

(বুখারি, হাদিস : ৫২৩৭)

যাই হোক, সফরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলাম সফরে নারীর সঙ্গে মাহরাম থাকা অপরিহার্য করে দিয়েছে। যেন সফরে মাহরাম পুরুষ নারীকে দুশ্চরিত্র লোকদের থেকে নিরাপদ রাখতে পারে এবং নারীর প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করতে পারে।

মাহরাম ছাড়া নারীর একাকী সফর বৈধ না হওয়ার কারণ হলো, সফরে স্বামী ও মাহরাম নারীর যতটুকু সম্মান ও সুরক্ষা করতে পারে, অন্য কেউ তা রক্ষা করতে পারে না।

আর আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.) যে বিধান দিয়েছেন, মুসলমানরা তা মানতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আছে কী নেই, বদনাম হবে কী হবে না, তা বিবেচ্য নয়। আর হ্যাঁ, ইসলামের বিধান শুধু আত্মসমর্পণকারী মুসলিম নর-নারীর জন্য।

পাঠকের মতামত

বাণিজ্য মেলা দেখে থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন বন্ধু নিহত

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন বন্ধু নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ...

বাগ্‌দত্তাকে নিয়ে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক নিহত

ঢাকার বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল (২৬)। একই মেডিকেল কলেজের ...